ডোমেইন নেয়ার সময় বিবেচ্য বিষয় সমূহ

ডোমেইন হলো আপনার ওয়েব নাম। অনলাইনে যে নামে আপনাকে ভার্চুয়াল জগৎ চিনবে সেটাই আপনার ডোমেইন। এই নামটাও এক প্রকার সম্পদ। ডোমেইন শব্দের অর্থও তাই। সেজন্য এই সম্পদ কেনার সময় আপনাকে অবশ্যই কতোগুলো বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এই ডোমেইন নামও যে লাখ ডলারে বিক্রি হয়ে থাকে তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। অনেকে শুধু এই ডোমেইন বিক্রি করেও ব্যবসা চালায়।

তাই একটি ভালো ডোমেইন নেয়া এবং সেটি ধরে রাখার জন্য কয়েকটি বিবেচ্য বিষয় তুলে ধরবো যেগুলো আপনাদের কাজে লাগবে।

প্রথমত: টেকনিক্যাল বা কৌশলগত বিষয়
১. ডোমেইন নাম যত ছোট হবে তত ভালো। বানানটা যেন সহজ হয়। শুনলে বোঝা যায় এবং কোনো কনফিউশন তৈরী না হয়। এছাড়া অন্যকোনো কোম্পানীর কাছাকাছি নাম না হওয়াই ভালো। এই কারণে গ্রামীন এখানেই ডট কম বন্ধ করে দিয়েছিলো। কারণ সেখানেই ডটকম এর সাথে নামটা মিলে গিয়ে কিছু কনফিউশন তৈরী ভুল বোঝাবুঝি তৈরী হচ্ছিলো।

২. বর্তমানে .com সবচেয়ে জনপ্রিয় হলে। কিছু কিছু বিষয় সে রিলেটেড হলে .com জরূরী নয়। যেমন আজকাল টিভি চ্যানেলগুলো .tv এবং রেডিও স্টেশনগুলো .fm ডোমেইন নিয়ে থাকে। এরকম না হলে আপনি .com ই বাছাই করতে পারেন। সামাজিক সংগঠন হলে .org নিতে পারেন। একই নামে কোনো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান থাকলে সে নাম না নেয়াই ভালো, সেটা .com হোক আর যাই হোক।

৩. যে বিষয়ের ওয়েবসাইট হবে নামটা যেন বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সেটাও খেয়াল রাখা উচিত। তাহলে আপনি গুগল সার্চিংএ একটু হলেও এগিয়ে থাকবেন। 

৪. অনেকে কনফিউশনে থাকেন ইংরেজী নাম নেবেন নাকি বাংলা নাম নেবেন। প্রথমত ইংরেজী নাম নিলেই ভালো এসইও সহজ হবে। কিন্তু আপনি চাইলেও আসলে ইংরেজী নামে এখন আর কোনো শব্দই খালি পাবেন না। পেলেও সেটা হয়তো জটিল কোনো নাম হবে। সহজ সরল ও শুনলে মনে থাকে এরকম নাম হলে বাংলা নামও হতে পারে। 

দ্বিতীয়ত টেকনোলজিক্যাল বা প্রযুক্তিগত বিষয়

১. অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজেই নিজের ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করুন। আর অন্যকারো কাছ থেকে ডোমেইন নিলেও সেটা অবশ্যই নিজের নামে এবং নিজের ই-মেইল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিবেন। সেখানে এমন একটি ইমেইল আইডি দিবেন যেটা খুব নিরাপদ ও আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন। 

২. অনেকে মনে করেন মনে হয় বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকে ডোমেইন নিলে ভালো। বিদেশী কোম্পানী দেশী কোম্পানীর চেয়ে বেশী পেশাদার হবে। কথাটা সত্য কিন্তু এটা যেহেতু একটা টেকনিক্যাল ব্যাপার সে বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। কারণ কোনো সমস্যা দেখা দিলে আপনি দেশীয় কোম্পানীর কাছ থেকে যেভাবে সাপোর্ট নিতে পারবেন বিদেশী কোম্পানীর ক্ষেত্রে সবসময় তেমনটা নাও পেতে পারেন।

তবে দেশীর কোম্পানী থেকে ডোমেইন নেয়ার আগে অবশ্যই খোজ-খবর নিয়ে ডোমেইন নিবেন। কারণ সব জায়গায় ব্যবসায়ীর পাশাপাশি দুষ্টু লোকও আছে।

৩. কোনো জটিল কারেক্টার যেমন, #*-@ এসব ব্যবহার করবেন না। এমনকি ডট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ যারা আপনার ওয়েব এড্রেস না জেনে অনলাইনে সার্চ করবে তারা ডট দিয়ে সার্চ করার সম্ভাবনা নেই। প্রথম আলো কতৃপক্ষ www.prothomalo.com ডোমেইনটি না পেয়ে দীর্ঘদিন www.protho_malo.com রেখে সর্বশেষ www.prothomalo.com কিনতে বাধ্য হয়েছিলো। 

৪. ডোমেইনটা হোস্টিং এর সাথে রিলেটেড। তাই হোস্টিং যে কোম্পানী থেকে নিবেন, সেখান থেকেই ডোমেইন নেয়া ভালো। তাতে আপনি ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভিস একই সাথে পাবেন। এতে করে সাইড লোড করার গতিও ভালো পাবেন। 

ডোমেইন কেনার পূর্বে: 

১) কি ধরনের ওয়েবসাইট করতে চাচ্ছেন সেটা ঠিক করুন তারপর ডোমেইন নেম কি হবে সেটা নিয়ে অনলাইনে একটা রিসার্চ করে নিন। বানানের ব্যাপারটা পরিষ্কার করে ডোমেইন ঠিক করবেন। কী ওয়ার্যড রিসার্চ করে নিতে পারেন, আর অবশ্যই চেক করে নিতে পারেন এই নাম খালি আছে কিনা?

২) যে প্রতিষ্ঠান থেকে কিনবেন সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোজ খবর নিতে ভুলবেন না। বাংলাদেশী প্রোভাইডারের কাছে ডোমেইন নিলে আগেই আলাপ করে নেবেন আপনাকে ডোমেইনের ফুল কন্ট্রোল প্যনেল দিবে কিনা? অবশ্যই  ফুল কন্ট্রোল প্যানেলসহ ডোমেইন কেনার চেষ্টা করবেন। 

সতর্কতা:

১। কখনো কম দামে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন অফার দেখে লোভে পড়বেন না। এটা একটা চালাকি। প্রথম বছর আপনার কাছ থেকে ১ ডলার নেবে। ১০ ডলারের বাকী টাকা ঠিকই পরের বছরের ফি এর সাথে এড করে দেবে। সূতরাং এখানে খুশি হওয়ার কিছু নেই। ডোমেইনের মূল্য ৮০০-১০০০ টাকা হয়ে থাকে। সতর্ক থাকুন। 

২। নিজে অনলাইনে ডোমেইন কিনলে যদি সাইনআপ করে কিনতে হয় তাহলে সিকিউরিটি তথ্য যেমন পাসওয়ার্ড ইউজার আইডি এসব কারো সাথে শেয়ার করবেন না। আর দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিনলেও নিজসস্ব ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করুন।

 আরেকটি কথা

একটি ডোমেইন অনেক দিন চালানোর পর আপনার যদি মনে হয় আপনি আর সেটি রাখতে চান না। তাহলে সেটি আপনি রিনিউ না করলেই হবে। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হয়, কোনো অনলাইন ক্লাসিফাইড সাইটে বা ফেসবুকে ডোমেইন বেচে দেয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করে দিলে। বেশী দামে বিক্রি করলে আপনি লাভবানও হতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *